পাইলসের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ? পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় জেনে নিন!

পাইলস, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় হেমোরয়েডস (Haemorrhoids) নামে পরিচিত, বর্তমান সময়ের একটি বহুল আলোচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাগুলো পাইলসের প্রকোপ বৃদ্ধি করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য মতে, বিশ্বের প্রায় ৫০% মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় পাইলসের সমস্যায় ভুগে থাকেন। পাইলসের যন্ত্রণা অত্যন্ত ভয়াবহ এবং এটি দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। মলত্যাগের সময় তীব্র ব্যথা, রক্তক্ষরণ, মলদ্বারে চুলকানি, জ্বালাপোড়া, এবং ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গগুলো ভুক্তভোগীর জীবনকে করে তোলে অতিষ্ঠ।

কিন্তু ভালো খবর হলো, সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো পাইলস কী, কেন হয়, এর লক্ষণগুলো কী কী, পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা, ডাক্তারি চিকিৎসা এবং সর্বোপরি কীভাবে আপনি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন। এই আর্টিকেলটি আপনাকে পাইলস সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা প্রদান করবে এবং এই অস্বস্তিকর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।

পাইলস কী?

পাইলস বা হেমোরয়েডস হলো মলদ্বার এবং মলদ্বারের নিকটবর্তী শিরাগুলির ফুলে যাওয়া এবং প্রদাহ। আমাদের মলদ্বারের ভেতরে এবং বাইরে রক্তনালীর জালিকা থাকে। যখন এই রক্তনালীগুলো ফুলে যায় এবং প্রসারিত হয়, তখন তাকে পাইলস বলা হয়। এই ফুলে যাওয়া শিরাগুলো মলত্যাগের সময় ঘষা লেগে ফেটে গিয়ে রক্তপাতের সৃষ্টি করতে পারে।

NIH এর NIDDK (National Institute of Diabetes and Digestive and Kidney Diseases)- পাইলস সম্পর্কিত তথ্য গুলো

পাইলসের প্রকারভেদ:

পাইলস সাধারণত দুই প্রকার:

অভ্যন্তরীণ পাইলস (Internal Haemorrhoids): অভ্যন্তরীণ পাইলস মলদ্বারের ভেতরে অবস্থিত থাকে। এগুলো সাধারণত ব্যথাহীন হয়, তবে মলত্যাগের সময় রক্তপাত হতে পারে। অনেক সময় অভ্যন্তরীণ পাইলস মলদ্বারের বাইরে বের হয়ে আসতে পারে, যাকে প্রোল্যাপ্সড হেমোরয়েড (Prolapsed Haemorrhoid) বলা হয়।
বাহ্যিক পাইলস (External Haemorrhoids): বাহ্যিক পাইলস মলদ্বারের বাইরে ত্বকের নিচে অবস্থিত থাকে। এগুলো অত্যন্ত বেদনাদায়ক হতে পারে। এ ছাড়া এগুলোতে চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। বাহ্যিক পাইলসে রক্ত জমাট বেঁধে থ্রম্বোসিস (Thrombosis) হতে পারে, যা তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে।

পাইলস কেন হয়?

পাইলস হওয়ার পেছনে নির্দিষ্ট কিছু কারণকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • কোষ্ঠকাঠিন্য: দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য পাইলসের অন্যতম প্রধান কারণ। কঠিন মল ত্যাগ করার সময় মলদ্বারের শিরাগুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যার ফলে সেগুলো ফুলে যেতে পারে।
  • দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা: টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা একটানা অনেকক্ষণ বসে কাজ করার অভ্যাস মলদ্বারের শিরাগুলোতে চাপ সৃষ্টি করে।
  • গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় বর্ধিত জরায়ু পেটের নিচের অংশে চাপ সৃষ্টি করে, যা পাইলসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
  • স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন মলদ্বারের শিরাগুলোর ওপর চাপ বৃদ্ধি করে।
  • ভারী জিনিস উত্তোলন: নিয়মিত ভারী জিনিস উত্তোলনের ফলে পেটে চাপ পড়ে এবং পাইলস হতে পারে।
  • পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারের অন্য কারও পাইলসের ইতিহাস থাকলে, আপনারও পাইলস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস: অস্বাস্থ্যকর খাবার, যেমন- অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, কম আঁশযুক্ত খাবার ইত্যাদি পাইলসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • পর্যাপ্ত পানি পান না করা: কম পানি পান করার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, যা পাইলসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

পাইলসের লক্ষণ

পাইলসের লক্ষণগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কারো ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো হালকা হতে পারে, আবার কারো ক্ষেত্রে তীব্র। এখানে কিছু সাধারণ লক্ষণের কথা উল্লেখ করা হলো:

  • মলত্যাগের সময় রক্তপাত: এটি পাইলসের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। মলত্যাগের সময় তাজা লাল রক্ত দেখা যেতে পারে। এই রক্ত টয়লেট পেপারে, কমোডে, কিংবা মলের সাথে মিশে থাকতে পারে।
  • মলদ্বারে চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও ব্যথা: পাইলসের কারণে মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং ব্যথা হতে পারে। বাহ্যিক পাইলসের ক্ষেত্রে ব্যথা তীব্র হতে পারে, বিশেষ করে যদি তাতে রক্ত জমাট বাঁধে।
  • মলদ্বারে ফোলা ভাব: পাইলসের কারণে মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরে ফোলা ভাব অনুভূত হতে পারে। এই ফোলা অংশটি আঙ্গুল দিয়ে অনুভব করা যেতে পারে।
  • মলত্যাগে অসুবিধা: পাইলসের কারণে মলত্যাগে অসুবিধা হতে পারে। মলত্যাগের সময় মনে হতে পারে যে মল পুরোপুরি বের হচ্ছে না।
  • মিউকাস (Mucus) নিঃসরণ: মলদ্বার থেকে মিউকাস বা শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থ বের হতে পারে।
  • মলদ্বারে অস্বস্তি: মলদ্বারে ভারি ভাব, অস্বস্তি, কিছু একটা আটকে আছে এমন অনুভূতি হতে পারে।

কিছু ক্ষেত্রে, পাইলসের কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। কারণ এই লক্ষণগুলো অন্য কোনো রোগের কারণেও হতে পারে।

পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা

পাইলসের সমস্যা যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে, তাহলে ঘরোয়া কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে এর উপসর্গগুলো উপশম করা সম্ভব। এখানে কিছু কার্যকরী ঘরোয়া চিকিৎসার কথা উল্লেখ করা হলো:

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন:

পাইলসের চিকিৎসায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • আঁশযুক্ত খাবার: প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার, যেমন: শাকসবজি (ঢেঁড়স, কচু, মিষ্টি আলু, ইত্যাদি), ফলমূল (কলা, পেঁপে, আপেল, ইত্যাদি), ডাল, ওটস, লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করুন। আঁশযুক্ত খাবার মল নরম করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • প্রচুর পানি পান: প্রতিদিন কমপক্ষে ২-৩ লিটার (৮-১০ গ্লাস) পানি পান করুন। পানি মলকে নরম রাখে এবং মলত্যাগ সহজ করে।
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন: প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন: ফাস্ট ফুড, চিপস, কোল্ড ড্রিংকস, ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। এই খাবারগুলোতে আঁশের পরিমাণ কম থাকে এবং এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে।
  • মসলাযুক্ত খাবার কম খান: অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার মলদ্বারে জ্বালাপোড়া বৃদ্ধি করতে পারে।

নিয়মিত ব্যায়াম:

নিয়মিত ব্যায়াম, যেমন: হাঁটা, সাঁতার কাটা, যোগব্যায়াম ইত্যাদি পাইলসের সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতে পারে। ব্যায়াম অন্ত্রের চলাচলকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।

বরফের সেঁক:

মলদ্বারে ফোলা ভাব এবং ব্যথা কমাতে বরফের সেঁক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। একটি কাপড়ে কয়েক টুকরো বরফ পেঁচিয়ে আক্রান্ত স্থানে ১০-১৫ মিনিট ধরে রাখুন। দিনে কয়েকবার এটি পুনরাবৃত্তি করুন।

সিজ বাথ (Sitz Bath):

কুসুম গরম পানিতে দিনে ২-৩ বার সিজ বাথ নিলে পাইলসের ব্যথা, চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া কমে। একটি গামলায় কুসুম গরম পানি নিয়ে তাতে ১০-১৫ মিনিট নিতম্ব ডুবিয়ে বসে থাকুন। আপনি চাইলে পানিতে সামান্য লবণ বা বেকিং সোডা মিশিয়ে নিতে পারেন।

ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ:

ফার্মেসিতে পাইলসের জন্য বিভিন্ন মলম, ক্রিম এবং সাপোজিটরি পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহারে ব্যথা, চুলকানি এবং ফোলা ভাব কমতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

মলত্যাগের অভ্যাস:

  • মলত্যাগের বেগ আসলে আটকে রাখবেন না।
  • মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করবেন না।
  • টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকবেন না।

অন্যান্য:

  • ঢিলেঢালা সুতির অন্তর্বাস পরিধান করুন।
  • দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এড়িয়ে চলুন।
  • ভারী জিনিস উত্তোলন থেকে বিরত থাকুন।
  • মলদ্বার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।

পাইলসের ডাক্তারি চিকিৎসা

ঘরোয়া চিকিৎসায় পাইলসের উপসর্গ উপশম না হলে, কিংবা পাইলস যদি গুরুতর আকার ধারণ করে, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ডাক্তার আপনার পাইলসের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। এখানে কিছু প্রচলিত ডাক্তারি চিকিৎসা পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হলো:

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?

  • ঘরোয়া চিকিৎসায় অবস্থার উন্নতি না হলে।
  • মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হলে।
  • মলদ্বারে তীব্র ব্যথা হলে।
  • পাইলস মলদ্বারের বাইরে বের হয়ে আসলে এবং ভেতরে ঢোকানো না গেলে।
  • জ্বর, কাঁপুনি, বা মলত্যাগে অক্ষমতার মতো উপসর্গ দেখা দিলে।

বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি:

রাবার ব্যান্ড লাইগেশন (Rubber Band Ligation):

এই পদ্ধতিতে, অভ্যন্তরীণ পাইলসের গোড়ায় একটি ছোট রাবার ব্যান্ড পরিয়ে দেওয়া হয়। রাবার ব্যান্ডটি রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, যার ফলে কয়েক দিনের মধ্যে পাইলস শুকিয়ে ঝরে পড়ে। এটি একটি ব্যথাহীন এবং কার্যকরী পদ্ধতি।

স্ক্লেরোথেরাপি (Sclerotherapy):

এই পদ্ধতিতে, পাইলসের ভেতরে একটি রাসায়নিক দ্রবণ ইনজেকশন করা হয়। এই দ্রবণটি পাইলসের টিস্যুগুলোকে সংকুচিত করে এবং শুকিয়ে ফেলে।

ইনফ্রারেড ফটোকোয়াগুলেশন (Infrared Photocoagulation):

এই পদ্ধতিতে, ইনফ্রারেড রশ্মি ব্যবহার করে পাইলসের টিস্যুগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এটি ছোট অভ্যন্তরীণ পাইলসের জন্য একটি কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি।

হেমোরয়েডেক্টমি (Haemorrhoidectomy):

এটি একটি শল্যচিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে পাইলস কেটে ফেলা হয়। বড় আকারের অভ্যন্তরীণ পাইলস, প্রোল্যাপ্সড পাইলস (যা বাইরে বের হয়ে আসে) এবং বাহ্যিক পাইলসের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এটি একটি কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি, তবে এতে কিছুটা ব্যথা হতে পারে এবং সেরে উঠতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

স্ট্যাপলড হেমোরয়েডোপেক্সি (Stapled Haemorrhoidopexy):

এই পদ্ধতিতে একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে প্রোল্যাপ্সড পাইলস (অর্থাৎ যে পাইলস বাইরে বের হয়ে এসেছে) মলদ্বারের ভেতরে ঠেলে দেয়া হয় এবং সেখানে সেলাই (staple) করে দেয়া হয়। এটি হেমোরয়েডেক্টমির তুলনায় কম বেদনাদায়ক।

অন্যান্য পদ্ধতি:

এছাড়াও আরও কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, যেমন:

  • লেজার চিকিৎসা (Laser Therapy)
  • ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery)

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: কোন চিকিৎসা পদ্ধতিটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে তা নির্ভর করবে আপনার পাইলসের ধরণ, আকার এবং তীব্রতার উপর। তাই নিজে কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচন না করে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পাইলস প্রতিরোধ

পাইলস সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও, কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে পাইলস হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। নিম্নলিখিত উপায়গুলো আপনাকে পাইলস প্রতিরোধে সাহায্য করবে:

স্বাস্থ্যকর জীবনধারা:

  • সুষম খাদ্য গ্রহণ: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার, যেমন: শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, ওটস, লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি ইত্যাদি রাখুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন (অন্তত ৮-১০ গ্লাস)। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এবং চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম, যেমন: হাঁটা, সাঁতার কাটা, যোগব্যায়াম ইত্যাদি অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, যা পাইলস প্রতিরোধে সহায়ক।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন পাইলসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
  • ধূমপান ত্যাগ: ধূমপান পাইলসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তাই ধূমপান ত্যাগ করুন।
  • নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস: মলত্যাগের বেগ আসলে আটকে রাখবেন না। মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করবেন না। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • মলত্যাগের সময় সতর্কতা: টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকবেন না। মলত্যাগের পর মলদ্বার ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। শক্ত টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করবেন না। ভেজা টিস্যু ব্যবহার করা ভালো।
  • দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এড়িয়ে চলা: দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে মলদ্বারের শিরাগুলোতে চাপ পড়ে। তাই দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এড়িয়ে চলুন। প্রতি এক ঘন্টা পর পর উঠে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন।
  • ভারী জিনিস উত্তোলন থেকে বিরত থাকা: ভারী জিনিস উত্তোলনের সময় পেটের উপর চাপ পড়ে, যা পাইলসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তাই ভারী জিনিস উত্তোলন থেকে বিরত থাকুন। যদি ভারী জিনিস তুলতেই হয়, তাহলে সঠিক পদ্ধতিতে তুলুন যাতে পেটে চাপ না পড়ে।
  • গর্ভাবস্থায় সতর্কতা: গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খান এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই যতটা সম্ভব মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে যোগব্যায়াম, মেডিটেশন করতে পারেন।

আরও জানুন- দ্রুত ওজন কমানোর গোপন রহস্য

উপসংহার

পাইলস বা হেমোরয়েডস একটি যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা হলেও, সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এই আর্টিকেলে আলোচিত ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো আপনাকে পাইলসের প্রাথমিক উপসর্গগুলো উপশম করতে সাহায্য করবে। তবে, পাইলসের সমস্যা যদি গুরুতর আকার ধারণ করে, তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। মনে রাখবেন, লজ্জা না করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সুস্থ জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম, আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে আপনি পাইলস প্রতিরোধ করতে পারেন। নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ না করাও অত্যন্ত জরুরি। পাইলস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিশেষে, সুস্থ থাকুন, পাইলসের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকুন এবং জীবনকে উপভোগ করুন।

Leave a Comment