স্বাগতম! আমি তাকবির আহমেদ হিমু, একজন ভ্রমণপ্রেমী এবং ফটোগ্রাফি উৎসাহী। গত কয়েক বছর ধরে আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করছি। কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ করাটা আমার কাছে একটা নেশার মতো। প্রতিটা ভ্রমণেই আমি নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই এবং সেগুলো থেকে অনেক কিছু শিখি। বিশেষ করে, বিদেশ ভ্রমণ কীভাবে আরও সাশ্রয়ী এবং সহজ করা যায়, সেই বিষয়ে আমি বেশ কিছু কার্যকরী কৌশল রপ্ত করেছি।
এই আর্টিকেলে আমি আমার সেই অর্জিত জ্ঞান এবং কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ করার টিপসগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে, আপনার বিদেশ ভ্রমণ হবে আরও সাশ্রয়ী, সহজ এবং আনন্দদায়ক। তাহলে আর দেরি কেন? চলুন, জেনে নেওয়া যাক কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ করার ১৫টি অত্যন্ত কার্যকর ও সাশ্রয়ী টিপস!
১. অগ্রিম বুকিং: কম খরচে নিশ্চিত করুন আপনার ভ্রমণ
কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ করতে চাইলে অগ্রিম বুকিং এর বিকল্প নেই। আপনার ভ্রমণের তারিখের কমপক্ষে কয়েক মাস আগে থেকেই টিকেট বুকিং করে রাখুন। সেটা হতে পারে বিমানের টিকেট, হোটেলের রুম, কিংবা যাতায়াতের জন্য বাস/ট্রেনের টিকেট। মনে রাখবেন, যত আগে বুকিং করবেন, খরচ তত কম হবে।

বিভিন্ন এয়ারলাইন্স এবং হোটেলগুলো মাঝে মধ্যেই আকর্ষণীয় সব অফার দিয়ে থাকে। চেষ্টা করবেন এই অফারগুলো লুফে নেওয়ার। তবে, একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, অফারের টিকেটগুলো নন-রিফান্ডেবল হয়। অর্থাৎ, কোন কারণে আপনার ভ্রমণের তারিখ পরিবর্তন করতে হলে বা ভ্রমণ বাতিল করতে হলে, টিকেটের টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। তাই, বিদেশ ভ্রমণ এর জন্য টিকেট কাটার আগে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনাটি ভালোভাবে যাচাই করে নিন।
বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের দাম তুলনা করাতে আপনাকে সাহায্য করবে Skyscanner
২. স্থানীয় ভাষা: অল্পতেই জয় করুন ভিনদেশীদের মন
বিদেশ ভ্রমণ করতে গেলে ভাষা অনেক বড় একটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই, আপনি যে দেশে যাবেন সেই দেশের বহুল ব্যবহৃত অন্তত ২৫-৩০টি বাক্য শিখে নিন। ইউটিউবে এই সংক্রান্ত অনেক টিউটোরিয়াল ভিডিও পাওয়া যায়, যেগুলো আপনাকে সাহায্য করবে।

অনেক উন্নত দেশে, বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে, ইংরেজি ভাষার প্রচলন খুব কম। সে সব দেশে শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষায় কথা বলে যোগাযোগ করা বেশ কঠিন। তাই, স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগের জন্য কিছু বেসিক বাক্য শিখে গেলে আপনার কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ অনেক সহজ এবং সাবলীল হবে। শুধু তাই নয়, স্থানীয়দের সাথে তাদের ভাষায় কথা বলতে পারলে আপনি তাদের কাছ থেকে আরও ভালো ব্যবহার এবং আপ্যায়ন পাবেন।
৩. ঝামেলাহীন লেনদেনের জন্য ডুয়াল কারেন্সি প্রি-পেইড কার্ড
বিদেশ ভ্রমণ এর সময় ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড থাকাটা বেশ সুবিধাজনক। কিন্তু যাদের ক্রেডিট কার্ড নেই, কিংবা যারা ক্রেডিট কার্ডের জটিলতায় যেতে চান না, তাদের জন্য ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) দিচ্ছে একটি চমৎকার সমাধান – ইবিএল অ্যাকুয়া মাস্টারকার্ড। এটি একটি ডুয়াল কারেন্সি প্রি-পেইড কার্ড।

মাত্র ৫০০ টাকা এবং একটি ভ্যালিড পাসপোর্ট থাকলেই আপনি এই কার্ডটি করে নিতে পারবেন। কার্ডে রিচার্জ করা টাকা আপনি সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। এই কার্ড ব্যবহার করে আপনি অনলাইনে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩০০ ডলার পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন করতে পারবেন। কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে, এই কার্ডটি ব্যবহার করে আপনি দেশের বাইরে হোটেল বুকিং, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা, এবং বিভিন্ন পরিবহনের টিকেট বুকিং এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সহজেই করতে পারবেন।
৪. পূর্ব পরিকল্পনা: সাশ্রয়ী ভ্রমণের মূলমন্ত্র
কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে পূর্ব পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার ভ্রমণের আগে গন্তব্য সম্পর্কে ভালোভাবে রিসার্চ করে নিন। বিশেষ করে, আপনি যেসব স্থানে ভ্রমণ করতে চান, সেসব স্থানের খোলার সময়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং প্রবেশ টিকেটের মূল্য সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিন।

অনেক দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের টিকেট, এমনকি যানবাহন, ভ্রমণের বিভিন্ন জিনিসপত্র অনলাইনে ডিসকাউন্টে অগ্রিম কেনা যায়, অথবা প্রি-অর্ডার করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ থেকে প্রি-বুক করার মাধ্যমে, আপনি ইতালিতে পৌঁছানোর পরে ১৫% ডিসকাউন্টে সিম কার্ড কিনতে পারবেন। তাই, বিদেশ ভ্রমণ এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রাখলে আপনার ভ্রমণ হবে আরও সাশ্রয়ী এবং ঝামেলাহীন।
বিভিন্ন পর্যটন স্থান সম্পর্কে রিভিউ ও তথ্য জানার জন্য আপনাকে সাহায্য করবে TripAdvisor
৫. স্থানীয় কারেন্সি:
বিদেশ ভ্রমণ এর সময় আমরা সাধারণত ডলার কিংবা ইউরোতে কারেন্সি কনভার্ট করে থাকি। তবে, ডলার/ইউরোর পাশাপাশি, আপনি যে দেশে ঘুরতে যাবেন সেই দেশের কিছু স্থানীয় কারেন্সিও সাথে নিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, অন্য দেশের এয়ারপোর্ট গুলোতে ডলার/ইউরোর বিনিময় হার তুলনামূলক কম থাকে।

আপনার কাছে যদি আগে থেকেই কিছু স্থানীয় কারেন্সি থাকে, তাহলে এয়ারপোর্টে নেমেই জরুরী কাজগুলো, যেমন: খাবার কেনা, যাতায়াতের ব্যবস্থা করা, সিমকার্ড কেনা – এই কাজগুলো সহজেই সেরে ফেলতে পারবেন। কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে, এটি একটি কার্যকর টিপস।
৬. পাবলিক ট্রান্সপোর্ট: সাশ্রয়ী ভ্রমণের সহজ উপায়
কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ করতে চাইলে, যাতায়াতের জন্য পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের বিকল্প নেই। আপনি যে দেশেই ভ্রমণ করেন না কেন, চেষ্টা করবেন সেই দেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে। এতে আপনার যাতায়াত খরচ অনেক কমে যাবে।
অনেক দেশে ভ্রমণকারীদের জন্য বিশেষ ‘ট্রাভেলার্স পাস’ পাওয়া যায়, যেগুলোতে যাতায়াতের সুবিধার পাশাপাশি বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের টিকেটও যুক্ত থাকে। এই পাসগুলো ব্যবহার করলে আপনি বিভিন্ন রকম ডিসকাউন্ট পাবেন। এছাড়াও, সরাসরি ট্যাক্সি ভাড়া না করে Uber, Grab এর মতো রাইড শেয়ারিং অ্যাপসগুলো ব্যবহার করতে পারেন। একেক দেশে একেক নামে রাইড শেয়ারিং কোম্পানি রয়েছে। ভ্রমণের আগে একটু খোঁজখবর নিয়ে এই অ্যাপসগুলো আপনার মোবাইলে ডাউনলোড করে রাখতে পারেন।

উন্নত দেশগুলোতে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের জন্য বান্ডেল অফারযুক্ত কার্ড পাওয়া যায়। একই কার্ড ব্যবহার করে বাস, ট্রেন, সাবওয়েতে যাতায়াত করা যায়। কার্ডের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে কনভেনিয়েন্ট স্টোরগুলো থেকে সহজেই রিচার্জ করা যায়। এই কার্ড ব্যবহার করলে বারবার টিকেট কেনার ঝামেলা থাকে না।
বিদেশ ভ্রমণ এর সময় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে যাতায়াত করার জন্য আপনি বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন। ইউরোপ ভ্রমণের জন্য দুটি জনপ্রিয় অ্যাপস হচ্ছে: Flixbus এবং GoEuro। Flixbus ব্যবহার করে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক গন্তব্যে কম খরচে বাস ভ্রমণ করা যায়। GoEuro ব্যবহার করে বাস, ট্রেন এবং বিমানের টিকেট একসাথে কাটা যায়।
৭. ডিসকাউন্ট: খোঁজ রাখুন, খরচ কমান
কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ করতে চাইলে, বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ছাড়ের উপর নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন সময়ে অনেক দর্শনীয় স্থানে প্রবেশের উপর ডিসকাউন্ট থাকে, আবার কখনও কখনও ফ্রি এন্ট্রির ব্যবস্থাও থাকে। এইসব অফার সম্পর্কে আগে থেকে খোঁজ খবর রাখলে আপনার ভ্রমণ খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।

অনেক শহরে আবার বিনামূল্যে বাস সার্ভিস চালু থাকে। আবার কোন কোন শহরে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু টিপস ও ট্রিকস জানা থাকলে যাতায়াত আরও সহজ হয় এবং খরচও কমে। তাই, বিদেশ ভ্রমণ এর আগে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে একটু রিসার্চ করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
৮. ছোট গ্রুপ: সাশ্রয়ী ও নিরাপদ ভ্রমণ
কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ এর জন্য ছোট গ্রুপে ভ্রমণ করা একটি কার্যকর কৌশল। গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ২ থেকে ৪ জনের মধ্যে রাখার চেষ্টা করবেন। বেশি সদস্য হলে আবার অন্য ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ছোট গ্রুপে একসাথে ঘুরলে থাকা, খাওয়া এবং যাতায়াত খরচ ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়, ফলে খরচ অনেক কমে যায়। এছাড়াও, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের টাউট-বাটপার থাকে। গ্রুপে একসাথে কয়েকজন থাকলে এইসব টাউট-বাটপার সহজে কাছে ঘেঁষতে পারে না। তাই, ছোট গ্রুপে ভ্রমণ করলে তা কেবল সাশ্রয়ীই হয় না, নিরাপদও হয়।
স্থানীয়দের সাথে বিনামূল্যে থাকার জন্য আপনাকে সাহায্য করবে Couchsurfing
৯. আবহাওয়া: পূর্ব প্রস্তুতি নিন, ঝামেলা এড়িয়ে যান
আপনি যে দেশে ভ্রমণ করতে যাচ্ছেন, সেই দেশের বর্তমান আবহাওয়া সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা নিয়ে রাখুন এবং সেই অনুযায়ী পোশাক নিতে ভুলবেন না। এতে করে হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনে আপনি অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়বেন না। বিদেশ ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করতে পারে।
১০. পানির বোতল: রিফিল করুন, অর্থ বাঁচান
বিদেশ ভ্রমণ এর সময় সাথে একটি ছোট খালি পানির বোতল রাখুন। বাইরের দেশগুলোতে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে, প্রায় সর্বত্রই বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়। পানির বোতল খালি হয়ে গেলে আপনি সহজেই সেটি রিফিল করে নিতে পারবেন। এতে করে আপনাকে বারবার পানি কিনে টাকা খরচ করতে হবে না।

তবে, এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশনের সময় খেয়াল রাখবেন যেন বোতলটি খালি থাকে। কারণ, ইমিগ্রেশনে আপনাকে ১০০ মিলিলিটারের বেশি কোন তরল পদার্থ বহন করতে দিবে না। পানির বোতল ভরা থাকলে তা ফেলে দিতে হবে। তাই, ইমিগ্রেশনের আগেই বোতল খালি করে নেওয়াই ভালো। প্রয়োজনে, বিমানের ভেতরে আবার রিফিল করে নিতে পারবেন। কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে, এটি একটি ছোট কিন্তু কার্যকরী টিপস।
১১. ট্রাভেল অ্যাপস: ঝামেলাহীন ভ্রমণের জন্য ডিজিটাল গাইড
বিদেশ ভ্রমণ পরিকল্পনা সহজ করার জন্য রয়েছে অসংখ্য ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস। আমি নিজে ব্যবহার করি inspirock.com, trip.com, এবং Google Trips। এই সাইটগুলো এবং অ্যাপসগুলোতে আপনার ভ্রমণের তারিখ এবং গন্তব্যস্থল লিখে দিলে, এরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার জন্য একটি ভ্রমণ পরিকল্পনা তৈরি করে দেবে। আপনি চাইলে এই প্ল্যানটি আপনার পছন্দ অনুযায়ী এডিটও করতে পারবেন। কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে এই অ্যাপসগুলো আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনাকে করবে আরও সহজ ও সুবিধাজনক।
১২. জিপিএস: অফলাইনেও পথ দেখাবে নির্ভুল
বিদেশ ভ্রমণ এ জিপিএস আপনার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু হতে পারে। ভ্রমণের শুরুতেই আপনার মোবাইলে গুগল ম্যাপস খুলে নিন। এরপর আপনি যেসব স্থানে ঘুরতে যাবেন, সেই স্থানগুলো সিলেক্ট করে অফলাইন ম্যাপ ডাউনলোড করে নিন। এতে করে জরুরি সময়ে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেও জিপিএস সিগন্যালের মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।

একইভাবে, গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করে আপনি যে দেশে যাচ্ছেন সেই দেশের ভাষা ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এতে করে স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করা আপনার জন্য অনেক সহজ হবে।
১৩. ব্যাকআপ: গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট রাখুন হাতের নাগালে
বিদেশ ভ্রমণ এর সময় আপনার যেসব গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিয়মিত দরকার হয়, সেগুলো ক্লাউড স্টোরেজে (যেমন: Google Drive, Dropbox) আপলোড করে রাখুন। এতে করে যেকোনো প্রয়োজনে আপনি সেগুলো সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। আর হ্যাঁ, পাসপোর্ট, ছবি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের একাধিক ফটোকপি সবসময় সাথে রাখতে ভুলবেন না। কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে, আপনার গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টগুলোর ব্যাকআপ রাখা অত্যন্ত জরুরি, কারণ হারিয়ে গেলে অনেক ঝামেলায় পড়তে হতে পারে।
১৪. প্রয়োজনীয় ওষুধ: সুস্থ থাকুন, ভ্রমণ উপভোগ করুন
বিদেশ ভ্রমণ এর সময় চাইলেই আপনি দোকান থেকে ওষুধ কিনতে পারবেন না। সব দেশে আমাদের দেশের মতো ফার্মেসি নেই। আর ফার্মেসি থাকলেও, অনেক দেশেই প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা হয় না। তাই, বিদেশ ভ্রমণ এর সময় অবশ্যই একটি ফার্স্ট এইড মেডিকেল কিট সাথে রাখুন। এই কিটে জ্বর, সর্দি, কাশি, পেট খারাপ, কাটাছেঁড়ার মলম, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ওষুধ রাখুন। কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে, অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা বাবদ খরচ অনেক বেশি হতে পারে, তাই প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

১৫. ইলেকট্রনিক ডিভাইস: সচল থাকুন নিরবিচ্ছিন্ন
বিদেশ ভ্রমণ এর সময় আপনি যেসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস (যেমন: ক্যামেরা, মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি) সাথে নিচ্ছেন, সেগুলোর চার্জার নিতে ভুলবেন না। সম্ভব হলে, অতিরিক্ত ব্যাটারি এবং পাওয়ার ব্যাংক (অবশ্যই হ্যান্ড লাগেজ কিংবা ব্যাকপ্যাকে এবং কোনমতেই ২০,০০০ মিলিএম্পিয়ারের বেশি নয়) সাথে নিয়ে নিন। এতে করে আপনার ডিভাইসগুলো সচল থাকবে এবং আপনি নিরবিচ্ছিন্নভাবে আপনার বিদেশ ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন : স্বল্প খরচে দার্জিলিং ভ্রমণ: কীভাবে যাবেন, কোথায় ঘুরবেন?
শেষ কথা ও পরামর্শ:
এই ছিল কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ এর ১৫টি অত্যন্ত কার্যকর ও সাশ্রয়ী টিপস। আশা করি এই টিপসগুলো আপনাদের বিদেশ ভ্রমণ আরও সহজ ও আনন্দময় করে তুলবে।
পরিশেষে একটি অনুরোধ, দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই ভ্রমণ করুন না কেন, মনে রাখবেন আপনি সেখানে আপনার দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আপনার আচার-আচরণ এবং কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিদেশীরা আপনার দেশ সম্পর্কে ধারণা পাবে। তাই এমন কোন কাজ করবেন না যাতে আপনার ব্যক্তিগত ভুলের কারণে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সম্পর্কে বিদেশীদের মনে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়।
বিদেশ ভ্রমণ হোক কম খরচে, হোক নিরাপদ ও আনন্দময়। আপনাদের সবার ভ্রমণ সুন্দর হোক। ধন্যবাদ।